![]() |
পা ও গোড়ালি ফাটার কর্যকরি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ |
🍃পা ও গোড়ালি ফাঁটা কি?
ঋতুর পালাবদলে শীত যখন আসে, তখন কমতে থাকে বাতাসের তাপমাত্রা, সেটি আমরা সবাই জানি। এর সঙ্গে আরো কমতে থাকে বাতাসের আর্দ্রতা। এ কারণে এই বিশেষ ঋতুতে দেখা যায় ত্বকের বিশেষ কিছু রোগ।
🍂আর কিছু কিছু রোগের উপসর্গ এত অস্বস্তিকর,যে স্বাভাবিক জীবনযাপন করা কষ্টকর হয়ে উঠে।
🍁শীত আসার আগেই তাই রোগীরা আতঙ্কে থাকেন।
তার মধ্যে পা ও গোড়ালি ফাঁটা অন্যতম।
সাধারন পা ও গোড়ালি ফাঁটার রোগের সাথে সাদৃশ্য অন্য রোগেও আক্রান্ত হয়ে থাকে।
যেমন:-
🌷১).হেরিডিটারি পামোপ্লান্টার কেরাটোডারমা፣
এটি এক ধরনের জিন বাহিত রোগ। এ ক্ষেত্রে রোগীর ত্বক প্রচন্ড পুরু হয়। এতটাই পুরু যা স্বাভাবিক বলে গণ্য হয় না।
এক্ষেত্রে রোগীর চামড়া স্বাভাবিকের চেয়ে 40% বেশি মোটা হয়। কাঠের মত মনে হয়।” এই ধরনের রোগীদের হাত পা খুব বেশি ফাটে। এমনকি তাদের দৈনন্দিন কাজকর্ম পর্যন্ত ব্যাহত হয়।
🌷২).সোরিয়াসিস ፤
এই উপসর্গে হাত পা ফেটে যায়। বিশেষত পা ফেটে লম্বা লম্বা ফিশার তৈরি হয় যেখান দিয়ে রক্ত বের হতে পারে।
🌲৩). এটোপিক ডার্মাটাইটিস
অ্যাটোপিক ডার্মাটাইটিস, একে একজিমাও বলা হয়, একটি সাধারণ চর্মরোগ যার বৈশিষ্ট হলো চুলকানি ও আঁশের মতো ত্বক।
এটি বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মধ্যে বেশী দেখা যায় এবং বারবার হতে পারে।
এমনকি জন্মের পর ছয় মাস বয়সেই এই রোগ দেখা দিতে পারে।
আবার যাদের এই রোগের প্রবনতা আছে,অনেক ক্ষেত্রে শীত কালে এই রোগ প্রকাশ হতে পারে,
বিশেষ করে পা ও গোড়ালি আক্রান্ত হলে সাধারণ পা ফাঁটা বলে ভুল হয়।
🌻 ৪).পিটোরিয়াসিস রুবরা পাইলারিস (পিআরপি) :
পিটিরিয়াসিস রুব্রা পিলারিস (পিআরপি) ত্বকের একাধিক রোগের বিরল সমস্যা, যাতে ত্বকে প্রদাহ এবং লালচে রঙয়ের আঁশের মতো দগদগে ভাব দেখা দেয়। পিআরপি পুরো শরীর অথবা পায়ের তলা, কনুই, হাঁটু এবং হাতের চেটোর মতো কিছু বিশেষ অংশকে আক্রান্ত করতে পারে।
অনেক সময় শীতের মরশুমে
সাধারণ পা ফাটার মতো এই রোগ প্রকাশ হতে পারে।
সাধারণ পা ফাঁটা কি কারণে হয় ?
সাধারন পা ফাটার অন্যতম এক কারণ হলো ভিটামিনের অভাব।
বিশেষতঃ ভিটামিন বি ও ভিটামিন সি ত্বকের যত্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
এই দুটি ভিটামিনের অভাবে ত্বকে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যার মধ্যে অন্যতম পায়ের গোড়ালি ফেটে যাওয়া।
এছাড়াও শরীরে জলের পরিমাণ কম হলেও পা ফাঁটে।
পা ফাঁটা প্রতিরোধে কি করণীয় ঃ-
শীত পরার সাথে সাথে ত্বক শুষ্ক হয়ে এক ধরনের টান অনুভব হয়। যার জেরে কি আপনার গোড়ালি ফেঁটে যায়।
যাঁদের পা ফাটার সমস্যা আছে , তাঁদের শীতের শুরুতেই মোজার সঙ্গে পা ঢাকা জুতো পরুন। বিশেষ করে গোড়ালি ঢাকা জুতো।
শীতের কয়েকটা মাস পা ঢাকা পাম্পসু'র উপর নির্ভর করুন।
স্নানের পর পায়ে নারিকেল তেল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করে, মোজা পরে পা ঢাকা জুতো ব্যবহার করুন।
প্রতিদিন কাজকর্মের শেষে বাড়িতে ফিরে অন্তত ২০ মিনিট রিঠা মেশানো উষ্ণ জলে পা চুবিয়ে রাখুন।
তারপর তুলে পামিস স্টোন বা ঝামাপাথর দিয়ে ঘষে নিয়ে একবার ধুয়ে নিন। তারপর নারিকেল তেল ও সরিষা তেল ১ঃ১ ভালো করে মিশিয়ে পায়ে লাগিয়ে দিন। এবং মোজা পরে নিন।
🌵হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমন্ধে আলোচনা করার আগে কয়েকটি কথা বলা প্রয়োজন।
🍁হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা শাস্ত্রে কোন রোগের চিকিৎসা হয় না। চিকিৎসা হয় রোগীর।রোগীর উপসর্গ উপর নির্ভর করে ঔষধ নির্বাচন করতে হয়।
তাই পা ফাঁটা যে কারনেই হোক, রোগীর উপসর্গ এবং কষ্ট উপর ভিত্তি করে সঠিক ঔষধ নির্বাচন করতে পারলে, সেই ঔষধে খুব ভালো কাজ করে।
🌿পা ফাঁটার কর্যকরি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ সমূহ
🥀১).PETROLEUM 30
গোড়ালি এবং পা ফাঁটা বা অন্য কোন চর্মরোগ শুধুমাত্র প্রতিবছরে শীত কালেই হয়। কিন্তু গ্রীষ্ম -কাল আরম্ভ হলে আপনা-আপনি ভালো হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে এই ঔষধ বিশেষ উপকারী। সে পা ফাঁটা হোক বা অন্য কোন চর্মরোগ হোক।
🌼২).GRAPHITIS 30
গ্র্যাফাইটিস চর্মরোগের উৎকৃষ্ট ঔষধ।
পায়ের গোড়ালি ফেঁটে ফিসার তৈরি হয়েছে এবং শক্ত হয়। হাঁটলে ব্যথা হয় কিন্তু এমনিতে কোন ব্যথা নেই। এমন কি হাত দিয়ে চাপ দিলেও ব্যথা হয় না কিন্তু চললে ব্যথা, এই উপসর্গ থাকলে এই ঔষধ বিশেষ কর্যকরি।
🌱৩).SULPHUR 6
এটিও চর্ম রোগের বিশেষ ঔষধ।
কিন্তু এই ঔষধ ব্যবহার করার আগে সাবধান হতে হয়। অনেক সময় এই ঔষধ প্রয়োগে চর্মরোগ বৃদ্ধি হয়।
গোড়ালি ফাঁটা বা পা ফাঁটায়
এই ঔষধের বিশেষ লক্ষ্মণ, ফাঁটা স্থানে চুলকবে। এবং
চুলকানো সময় খুবই সুখ অনুভব করবে কিন্তু চুলকানোর পরে ঐ স্থানে জ্বালা করবে।
রোগীর অপরিষ্কার স্বভাবের, এবং স্নান করতে অনিহা।
এই লক্ষ্মণ গুলো থাকলেই সালফার প্রয়োগ করবেন।
🌱৪).ANACARDIUM OXID 30
পায়ের গোড়ালি নয়, একমাত্র পায়ে তলা ফাঁটাতে এই ঔষধ কার্যকর।
🌳৫).X-RAY 30
পা বা পায়ের গোড়ালি ফাঁটার
অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঔষধ।
এই ঔষধের বিশেষ লক্ষ্মণ
আক্রান্ত স্থান শুষ্ক এবং চুলকানিযুক্ত।
রোগী যেখানে সুযোগ পায়, পা বা গোড়ালি ঘোষতে থাকে বা চুলকাতে থাকে। এবং আরাম বোধ করে।
সে ক্ষেত্রে এই ঔষধ বিশেষ কর্যকরি।
🌿৬). LYCOPODIUM 30
গোড়ালি ফাঁটা খুব ভালো ঔষধ।
যে সমস্ত রোগী রক্তে ইউরিক অ্যাসিড বেশি আছে। তাদের গোড়ালি ফাঁটাতে এই ঔষধ বিশেষ কর্যকরি।
এছাড়াও আরো হোমিওপ্যাথিক ঔষধ আছে।
তবে শুধু ঔষধ নির্ভর করবেন না নিয়মিত উপরের পরামর্শ মতো পায়ের যত্ন নিতে হবে।
🌴এখন একটি ঘরোয়া তৈরির মলম ফরমুলা।
এই মলম খুবই উপকারী। তিন থেকে সাত দিনের মধ্যে উপকার পাবেন। 🌹FORMULA ★*★*
উপাদান
১).নারিকেল তেল ৩০ গ্রাম।
২).সরিষা তেল ৩০ গ্রাম।
৩).নিম পাতার পেস্ট ৩০ গ্রাম। বা নিম তেল ৩০ গ্রাম।
( তাজা নিম পাতা Mixer Grinder এ বা শিলপাঠায় বেঁটে পেস্ট বানিয়ে নিন।)
🌴৪).ঘৃতকুমারী ( ALOE VERA) জেল ৩০ গ্রাম। বা ALOE VERA EXTRACT 30grm.
( প্যাকেটজাত অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করবেন না।)
🌺তাজা অ্যালোভেরার পরিপক্ব পাতা গোড়া থেকে কেটে নিয়ে উল্টো করে রাখবেন দুই ঘন্টার মতো তা থেকে হলুদ কষ বের হয়ে যাবে,তারপর সেই জেল ব্যবহার করবেন।
৫) গুড়ো হলুদ ৫ গ্রাম বা এক চামচ।
৬) মোম ( Paraffin) ৩০ গ্রাম।
৭). কর্পূর ১৫ গ্রাম।
( BHIMSENI CAMPHOR হলে ভালো হয়।)
🏵️পদ্ধতি
গ্যাস বা উনুনে একটি লোহার কড়াইয়ে তেল গুলো দিয়ে গরম করে নিন, তারপর flame কমিয়ে মোমগুলো টুকরো করে আস্তে আস্তে কড়াইএ দিন এবং নাড়তে থাকুন, এরপর মোম গোলে যাওয়ার পর নিম পাতা পেস্ট দিন এবং নাড়তে থাকুন, দুই মিনিট পর দিন ঘৃতকুমারী জেল দিন , আবার নাড়ুন তারপর দিন হলুদ গুড়ো, আবার দুই মিনিট নাড়া পর Oven বন্ধ করে দিন, অল্প অল্প নাড়তে থাকুন এবং কর্পূর মিশিয়ে দিয়ে আবার নাড়তে থাকুন। দুই -তিন মিনিট নাড়া পারে। ঠান্ডা হতে দিন।
আপনার মলম সম্পুর্ন তৈরি।
একবার মলম তৈরি করে নিলে, এক মাস ব্যবহার করতে পারবেন।
🌴মলম ব্যবহারের নিয়ম
প্রতিদিন কাজকর্মের শেষে অন্তত ২০ মিনিট boric acid powder মেশানো উষ্ণ গরম জলে পা চুবিয়ে রাখুন।
🌵তারপর তুলে পামিস স্টোন বা ঝামাপাথর দিয়ে ঘষে নিয়ে একবার ধুয়ে ফেলুন। এবং শুকনো কাপড় দিয়ে ভালো করে মুছে নিন, তারপর আপনার তৈরি মলমটি একটু গরম করে লাগিয়ে নিন। মলম শুকিয়ে গেলে মোজা পরে নিন।এবং সারারাত এই অবস্থা রেখে দিন।পরের দিন ধুয়ে ফেলুন। পর পর তিন এই পদ্ধতিতে মলম ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া শুরু হবে। ৭-১০ দিনের মধ্যে আপনার পা মলমল করবে।
🍁বিশেষ কথা জেনে রাখা ভালো। শরীর কে রোগ মুক্ত করতে প্রতিদিন আহারে ৫০% খাবার ফল এবং স্যালাট খান অথাৎ কাঁচা পাকা ফল কাঁচা সব্জি খান এতে শরীরে পটাসিয়াম ও সোডিয়াম পরিমাণের সমতা বজায় রাখে। পটাসিয়াম ও সোডিয়াম ১ঃ১ থাকলে কোন রোগ আক্রান্তের হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে । হলেও autophagy মাধ্যমে শরীর তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়।
0 Response to "পা ও গোড়ালি ফাটার কর্যকরি হোমিওপ্যাথিক ঔষধ"
Post a Comment