দীর্ঘদিন মন খারাপ থাকাকে বিষন্নতা বলা হয়। সাধারণত আপনজনের বিচ্ছেদ, ঘনিষ্ট কারাে মৃত্যু, প্রেমে ব্যর্থতা, চাকরি হারানাে, ব্যবসায়ে লােকসান, আশাভঙ্গ, অতীতের অপরাধের অনুশোচনা, বেশী বেশী লবণ খাওয়া, হতাশা, কঠিন কোন রােগে ভােগা, পারিবারিক অশান্তি, কোন ঔষধের কুফল, শৈশবে পাওয়া মানুষের দুর্ব্যবহার প্রভৃতি কারণে মানুষ বিষন্নতায় আক্রান্ত হয়। বিষন্নতায় আক্রান্ত হলে মানুষ অসহায় বােধ করতে থাকে, কঁদতে ইচ্ছে করে, নিরিবিলি থাকতে চায়, নিঃসঙ্গ থাকলে কেঁদে কেঁদে বুক ভাসায়, আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে হয়, কেউ কেউ আত্মহত্যা করে ফেলে, ক্ষুধা কমে যায়, মাথা ব্যথা হয় বেশী বেশী, বুক ধরফড়ানি, নিদ্রাহীনতা, পুরােপুরি পাগল হয়ে যাওয়া প্রভৃতি সমস্যা দেখা দেয়।
Auram Metallicum: অরাম মেট হলাে হােমিওপ্যাথিতে বিষন্নতার একটি শ্রেষ্ট ঔষধ। বিশেষত মারাত্মক ধরণের বিষন্নতা যাতে মানুষের মধ্যে আত্মহত্যার নেশা চেপে যায়, তাতে অরাম মেট ভালাে কাজ করে। সে ভাবে সে পৃথিবীতে বসবাসের অনুপযুক্ত এবং আত্মহত্যা করতে আনন্দ পায়। স্বর্ণ থেকে প্রস্তুত করা এই ঔষধটি আত্মহত্যা ঠেকানোর একটি শ্রেষ্ট ঔষধ। সাধারণত স্বর্ণ মানুষকে আত্মহত্যা করতে উৎসাহিত করে; যেমন মেয়েরা স্বর্ণের অলঙ্কার ব্যবহার করে বেশী আর এই কারণে তারা আত্মহত্যাও করে বেশী। কেননা সূর্ণ তাদের চামড়া দিয়ে অল্প অল্প করে শরীরে ঢুকে থাকে। পক্ষান্তরে স্বর্ণকে শক্তিকৃত করে তৈরী করা ঔষধ অরাম মেট মানুষের আত্মহত্যা করার ইচ্ছাকে নষ্ট করে দেয়।
Arsenicum Album : আর্সেনিকের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলাে উৎকণ্ঠা, অস্থিরতা, জ্বালাপােড়া ভাব, খুঁতখুঁতে স্বভাব, কাজে কর্মে একবারে নিখুঁত (perfectionistic), মৃত্যুকে ভয় পায় আবার আত্মহত্যা করতেও চায়, রাত ১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বিষন্নতা বেড়ে যায়, অজানা অমঙ্গলের ভয়, মনে হয় মানুষ খুন করেছে এমন টেনশান করতে থাকে, মনে হয় এখনই পুলিশ এসে তাকে গ্রেফতার করবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
Causticum : যারা অন্যের দুঃখ-কষ্ট দেখতে সহ্য করতে পারেন না, প্রতিবাদী স্বভাবের, অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে থাকতে পারেন না, ভুলাে মন, দরজা লাগানাে হয়েছে কিনা কিংবা চুলা নেভানাে হয়েছে কিনা বারবার গ্রীক্ষা করেন, এই ধরনের লোকদের বিষন্নতায় কষ্টিকাম প্রযােজ্য।
cimicifuga : সিমিসিফিউগার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলাে গােমড়ামুখ, দুঃখবােধ, নিদ্রাহীনতা, ভয় পায় সে মনে হয় পাগল হয়ে যাবে, কেউ আঘাত করবে অথবা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ভয় করে, মনে হয় সবকিছুকে একটি কালাে পর্দা ঢেকে দিয়েছে ইত্যাদি।
lgnatia Amara : অল্প সময় বা অল্প কয়েকদিন পূর্বে বড় ধরণের মানসিক আঘাত পাওয়ার কারণে বিষন্নতার সৃষ্টি হলে তাতে ইগ্নেশিয়া প্রয়ােগ করতে হবে। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলাে কোন কারণ ছাড়াই হাসে-কাদে, কিছুক্ষণ পরপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে, হাই তােলে, গলার মধ্যে একটা চাকার মতাে কিছু আটকে আছে মনে হওয়া, নিদ্রাহীনতা, মাথাব্যথা, পেটের মধ্যে খামচে ধরা ব্যথা ইত্যাদি।
Natrum Muriaticum : পক্ষান্তরে মানসিক আঘাত পাওয়ার পরে অনেক দিন কেটে গেলে তাতে নেট্রাম মিউর ঔষধটি প্রযােজ্য। সাধারণত খুবই সেনসেটিভ, সান্ত্বনা দিলে উল্টো আরাে ক্ষেপে যায়, লবণ জাতীয় খাবার বেশী খায় ইত্যাদি লক্ষণ থাকলে তাতে নেট্রাম মিউর ভালাে কাজ করে।
Kali Phosphoricum : সাধারণত কঠোর পরিশ্রমের কারণে, অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রমের ফলে, দীর্ঘদিন শােক-দুঃখ- আবেগ-উত্তেজনায় ভােগার কারণে বিষন্নতার সৃষ্টি হলে তাতে ক্যালি ফস ঔষধটি সুফল দিবে। কোন কাজে মনােযােগ দিতে না পারা, মানসিক পরিশ্রমে মাথাব্যথা, প্রচুর ঘামানাে, সহজে সর্দি লাগা, রক্তশূণ্যতা, নিদ্রাহীনতা, বদহজম প্রভৃতি সমস্যা একসাথে দেখা দিলে তাতে ক্যালি ফস প্রযােজ্য।
Natrum Carbonicum : সাধারণত নম্র-ভদ্র-শান্তিপ্রিয়-পরােপকারী স্বভাবের লােকদের ক্ষেত্রে এই ঔষধটি প্রযােজ্য, যারা ঝগড়া-ঝাটিকে ভয় পায়। কোন কারণে এরা কষ্ট পেলে সেটি মনের মধ্যে চেপে রাখে এবং বিষন্নতায় ভােগতে থাকে। এরা বিষন্নতায় আক্রান্ত হলে বসে বসে বিরহের গান শুনতে থাকে। এই ধরণের লােকদের ক্ষেত্রে নেট্রাম কার্ব হলো বিষন্নতার শ্রেষ্ট ঔষধ।
0 Response to "বিষন্নতা, হতাশা রোগের লক্ষণ ও সমাধান - Depression"
Post a Comment