আর্সেনিকের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে দেশের বিভিন্ন জেলায় অগণিত মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। পাশাপাশি যারা বেঁচে আছে তারাও সীমাহীন দুর্ভোগ পােহাচ্ছ। সাধারণত টিউবয়েলের বা গভীর নলকুপের পানির
এসব আর্সেনিক মানুষের শরীরে ঢুকে এবং তারপর প্রথমে হাতে-পায়ে ক্ষত হয়, তারপর গ্যাংগ্রিন হয় এবং তারপর ক্যানসারে আক্রন্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করে।
প্রচলিত এলােপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে গ্যাংগ্রিন বা ক্যানসারের কোন ভালাে চিকিৎসা নাই। অপারেশন করে কেটে ফেলাই তাদের একমাত্র চিকিৎসা। কিন্তু অপারেশনে গ্যাংগ্রিন তাে সারেই না; বরং ধীরে ধীরে তা আরাে মারাত্মক আকার ধারণ করতে থাকে। এলােপ্যাথিক ডাক্তাররা গ্যাংগ্রিন হলে প্রথমে আঙ্গুল কেটে ফেলে দেয়। তারপর গ্যাংগ্রিন যখন আরাে বাড়তে থাকে, তখন ডাক্তাররা পায়ের গােড়ালী পর্যন্ত কেটে ফেলে দেয়। তারপর হাটু পর্যন্ত এবং শেষে কোমর পর্যন্ত কেটে ফেলে দেয়। এই ধরণের বর্বর চিকিৎসার কারণে গ্যাংগ্রিনের যে-কোন রােগী সাধারণত অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। অথচ হােমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় বিনা অপারেশনে শুধু ঔষধের মাধ্যমে আর্সেনিকের বিষক্রিয়াজনিত সমস্যাগুলি খুব সহজেই নিরাময় করা যায়। কিন্তু না জানার কারণে এসব অসহায় রােগীদের অনেকেই হােমিও চিকিৎসা করাতে আসেন না।
Arsenicum Album : আর্সেনিকের বিষক্রিয়াজনিত সমস্যাগুলির জন্য সবচেয়ে ভালাে ঔষধ হলাে আর্সেনিক এলবাম। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলাে। ছুরি মারার মতাে ভয়ঙ্কর ব্যথা, আক্রান্ত স্থান কালচে রঙ ধারণ করে, ভীষণ জ্বালাপােড়া ভাব, অস্থিরতা, ওজন কমে যাওয়া, ভীষণ দুর্বলতা ইত্যাদি। ব্যথা সাধারণত মধ্যরাতে বৃদ্ধি পায় এবং গরম শেক দিলে কমে যায়। রােগী মৃত্যুর ভয়ে কাতর হয়ে পড়ে। সাধারণত উচ্চ শক্তিতে খাওয়া উচিত এবং বিনা প্রয়ােজনে ঘনঘন খাওয়া উচিত নয়।
Lachesis : আক্রান্ত স্থান নীলচে অথবা বেগুনি রঙ ধারণ করে, অল্প একটু কাটা থেকে প্রচুর রক্ত যায়, বেশী ভাগ ক্ষেত্রে রােগ প্রথমে শরীরের বাম পাশে আক্রমণ করে এবং সেখান থেকে ডান পাশে চলে যায়, সাংঘাতিক ব্যথার কারণে আক্রান্ত স্থান স্পর্শই করা যায় না, ঘুমের মধ্যে রােগের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, বেশী বেশী কথা বলে, হিংসুটে স্বভাবের ইত্যাদি লক্ষণে ল্যাকেসিস প্রযােজ্য।
Crotalus Horridus : এটি শরীরের ভিজা অংশের ক্ষতে-গ্যাংগ্রিনে প্রায়ই কাজে লাগে : যেমন জিহ্বা, টনসিল ইত্যাদিতে। ইহার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলাে দাঁতের মাড়ি-নাক-পাকস্থলী-ফুসফুস-মুত্রনালী-জরায়ু ইত্যাদি থেকে রক্ত ক্ষরণ, এমনকি পশমের গােড়া থেকেও রক্ত ক্ষরণ হয়, ঘনঘন জন্ডিসে ভােগে, মুখমন্ডল ফোলাফেলা, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ, রােগ প্রথমে শরীরের ডান পাশে আক্রমণ করে ইত্যাদি।
secale Cornutum : বৃদ্ধ বয়সের ক্ষত বা গ্যাংগ্রিনে। এটি বেশী ফলপ্রদ। মৌমাছির হুল ফোটানাের মতাে ব্যথা এবং গরমে সব সমস্যা বৃদ্ধি পায় আর ঠান্ডা প্রয়ােগে আরাম লাগে। চামড়া থাকে কুচকানাে এবং শুকনাে। আক্রান্ত অঙ্গ থাকে ঠান্ডা কিন্তু কাপড়-চোপড় দিয়ে আবৃত করা সহ্য হয় না। ক্ষুধা থাকে খুবই বেশী এবং সামান্য একটি ক্ষত থেকে পাঁচ-সাত দিন পর্যন্ত রক্ত ঝরতে থাকে।
Carbo Vegetabilis : বার্ধক্যজনিত ক্ষেত বা গ্যাংগ্রিন, লালচে-বেগুনি রঙের, আক্রান্ত অঙ্গ বরফের মতাে ঠান্ডা। দীর্ঘদিন রােগ ভােগার কারণে দুর্বল-অবসন্ন হওয়া রােগী, পেটে প্রচুর গ্যাস হয়, জীবনীশক্তি ক্ষয় পাওয়া কংকালসার ব্যক্তি, খোলা বাতাসের জন্য পাগল ইত্যাদি ইত্যাদি লক্ষণে কার্বো ভেজ প্রযোজ্য।
Arnica Montana : সাধারণত আঘাত পাওয়ার পরে সেই স্থানে গ্যাংগ্রিন দেখা দিলে তাতে আর্নিকা সেবন করা উচিত।
Hepar Sulph : হিপার সালফের প্রধান প্রধান লক্ষণ হলাে এরা সাংঘাতিক সেনসেটিভ (over- sensitiveness), এতই সেনসেটিভ যে রােগাক্রান্ত স্থানে সামান্য স্পর্শও সহ্য করতে পারে না, এমনকি কাপড়ের স্পর্শও না। কেবল মানুষের বা কাপড়ের স্পর্শ নয়, এমনকি ঠান্ডা বাতাসের স্পর্শও সহ্য করতে পারে না। সাথে সাথে শব্দ (গােলমাল) এবং গন্ধও সহ্য করতে পারে না। হিপারের শুধু শরীরই সেনসেটিভ নয়, সাথে সাথে মনও সেনসেটিভ। অর্থাৎ মেজাজ খুবই খিটখিটে। কাটা-ছেড়া-পােড়া ইত্যাদি ঘা/ক্ষত শুকাতে হিপার বেশী ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে মনে রাখতে হবে যে, হিপারের পূজ হয় পাতলা। যেখানে আঠালাে পুঁজ বা কষ বের হয়, সেখানে হিপারের বদলে ক্যালি বাইক্রোম (Kali Bichromicum) ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত উচ্চশক্তি ব্যবহার করতে হয়।
silicea : সিলিসিয়া ঔষধটি যাদের হাড়ের বৃদ্ধিজনিত সমস্যা আছে অর্থাৎ রিকেটগ্রস্থ লােকদের ক্ষেত্রে ভালাে কাজ করে। এই ঔষধে মেরুদন্ডের সাথে সম্পর্কিত কোন না কোন রােগ লক্ষণ থাকবেই। সিলিশিয়ার রােগীরা হয় শীতকাতর, রিকেটগ্রস্থ, এদের জন্মগত হাড়ের সমস্যা থাকে, মারাত্মক ধরণের বাতের সমস্যা থাকে, অমাবশ্যা-পূর্ণিমায় রােগের মাত্রা বেড়ে যায়, মনের জোর বা আত্মবিশ্বাস কমে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। সিলিশিয়ার প্রধান প্রধান লক্ষণ হলাে শরীর বা মনের জোর কমে যাওয়া, আঙুলের মাথায় শুকনা শুকনা লাগা, আলাে অসহ্য লাগা, কোষ্টকাঠিন্য, ঘনঘন মাথা ব্যথা হওয়া, চোখ থেকে পানি পড়া, মুখের স্বাদ নষ্ট হওয়া, মাংস-চর্বি জাতীয় খাবার অপছন্দ করা, আঙ্গুলের মাথা অথবা গলায় আলপিন দিয়ে খোঁচা দেওয়ার মতাে ব্যথা, পাতলা চুল, অপুষ্টি ইত্যাদি। সিলিশিয়ার পুঁজ থাকে পানির মতাে পাতলা।
0 Response to "আর্সেনিকের বিষক্রিয়া জনিত রোগের চিকিৎসা - Arsenic poisoning"
Post a Comment