হােমিওপ্যাথিক ঔষধের মাধ্যমে বাক শক্তিহীন পশু- পাখিদের রােগ-ব্যাধির চিকিৎসা করতে হলে আপনাকে অনেক বুদ্ধি খাটাতে হবে। কেননা মানুষ তার কষ্টের কথা বলতে পারে, বােরা মানুষ বলতে না পারলেও ঈঙ্গিতে অনেক কিছু বুঝতে পারে কিন্তু পশু-পাখিরা তার কোনটাই পারে না। লক্ষণ দেখে, চিন্তা করে, যুক্তি খাটিয়ে পশু-পাখিদের রােগ লক্ষণ আপনাকে বের করতে হবে। মানুষের মতাে পশু-পাখিদের বেলাতেও শারীরিক লক্ষণের চাইতে মানসিক লক্ষণকে বেশী গুরুত্ব দিতে হবে এবং যদি মানসিক লক্ষণ সংগ্রহ করতে পারেন, তবে তার ওপর ভিত্তি করে ঔষধ নির্বাচন করতে হব। যেমন- মনে করুন। আপনার পােষা বিড়ালটিকে আপনি ধমক দেওয়ার পর থেকে সে চুপচাপ হয়ে গেছে, আপনার কাছে আসে না, দুষ্টুমি করে না, খেলাধুলা করে না, তাহলে বুঝতে হবে সেটি খুবই অভিমানী / আবেগপ্রবন (Emotional / impulsive)। ফলে তার শারীরিক-মানসিক যেসব ঔষধ অভিমানী বা আবেগপ্রবন লােকদের কোন রােগে তাকে যে- সেগুলাে ক্ষেত্রে প্রযােজ্যথেকে মানানসই একটি ঔষধ নির্বাচন করে খাওয়াতে হবে। যদি দেখেন যে, আপনার পােষা কুকুরটি বাড়িতে কোন অপরিচিত লােককে ঢুকতে দেখলে আক্রমণ করতে যায় এবং খুবই উৎপাত করে, তাহলে বুঝতে হবে সন্দেহবাতিক স্বভাে (suspicious / mistrustful)। এভাবে সুক্ষ্মদৃষ্টিতে লক্ষ্য করে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে যে, আপনার পশু বা পাখিটি আনন্দিত না বিষন্ন, শান্ত না অস্থির, উদার না কৃপণ, বন্ধুবল না হিংসুটে, সাহসী না ভীতু, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নাকি নােংরা স্বভাবের ইত্যাদি ইত্যাদি। পশু-পাখিদেরকে ঔষধ খাওয়ানোর নিয়ম মানুষের মতােই, তবে শারীরিক আকৃতি অনুযায়ী পরিমাণে কম-বেশী খাওয়াতে পারেন। নীচে আমি পশু- পাখিদের রােগব্যাধির চিকিৎসার কৌশল বর্ণনা করেছি যা আপনাদের কাজে আসবে -
প্রথম কথা হলাে আধুনিক যুগের ৯৫% রােগের মূল কারণ হলাে টিকা (Vaccine)। মানুষ যেমন এলােপ্যাথিক ঔষধ কোম্পানীর অপপ্রচারের শিকার হয়ে ভূড়িভূড়ি টিকা নিতে থাকে, তেমনি তাদের গৃহপালিত পশুপাখিদেরকেও . টিকা নেওয়ার পর থেকে পশুটি এই ঘনঘন টিকা দিতে থাকে। কাজেই যদি জানতে পারেন যে রােগে আক্রান্ত হয়েছে, তবে অবশ্যই তাকে থুজা (Thuja Occidentalis) খাওয়াতে হবে। মনে করুন, আপনার কুকুরটি টিকা নেওয়ার পর থেকে মৃত বাচ্চা জন্ম দেওয়া শুরু করেছে, তাকে অবশ্যই থুজা খাওয়াতে হবে।
যেমন কোন ঘা / ক্ষত শুকাতে অনেক দেরী হলে তাকে সিলিশিয়া (Silicea) খাওয়াতে হবে। ইহা মানুষের বেলায় যেমন, তেমনি পশু-পাখিদের বেলাতেও প্রযােজ্য। ৩০ বা ২০০ শক্তিতে রােজ ২ বার করে ৩ দিন।
যেমন মনে করুন, একটি পশুর পশম ধরে টানতে সে ব্যথায় ককিয়ে ওঠে অথবা ভীষণ রেগে যায়, তবে বুঝতে হবে তার চামড়া বা শরীর খুবই স্পর্শকাতর বা ব্যথাযুক্ত হয়ে গেছে। এই ক্ষেত্রে তাকে হিপার সালফ (Hepar Sulph) খাওয়াতে হবে। হিপার সালফের একটি প্রধান লক্ষণ হলাে সে এতই উত্তেজিত থাকে যে, কাউকে খুন করা তার কাছে কোন ব্যাপারই না (murder in cool_head)I
মানুষ অপমানিত হয়ে কোন রােগে আক্রান্ত হলে যেমন স্ট্যাফিসেগ্রিয়া (Staphisagria) খাওয়াতে হয়, তেমনি কোন আদরের গৃহপালিত পশুও যদি গৃহকর্তা কর্তৃক অপমান বা দুর্ব্যবহারের পরে কোন রােগে আক্রান্ত হলে তাদেরকেও স্ট্যাফিসেগ্রিয়া ঔষধটি খাওয়াতে হবে।
কোন পশু-পাখির মধ্যেও যদি যৌন দুর্বলতা (impotence) অথবা মাত্রাতিরিক্ত যৌন উন্মাদনা (Satyiasis) দেখেন, তবে তাদেরকেও সেই ঔষধ দিতে হবে যা মানুষের বেলায় প্রযোজ্য।
স্তন্যপায়ী পশুদের স্তনের প্রদাহে (mastitis) বেলেডােনা (Belladonna) সবচেয়ে ভাল কাজ করে। যদি অনেকদিনের পুরনাে প্রদাহ হয় সেক্ষেত্রে কোনায়াম (Conium_Maculatum) প্রয়োগ করুন।
জার্মান হােমিও চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডাঃ বনিংহুসেন (এম.ডি.) পাখিদের চিকিৎসায় উচ্চ শক্তির ঔষধ ব্যবহার করতেন। নীচে কয়েকটি আপনাদের অবগতির জন্য দিলাম :- রােগীলিপি
১. একটি মাদী ঘােড়ার বাচ্চা হওয়ার সাতদিন পরও রক্তক্ষরণ হইতেছিল । স্যাবাইনা (Sabina), সিকেলি কর (Secale Cornatum) ঔষধ দুইটি প্রয়ােগের পর সমস্যাটি চলে যায়।
২. একটি মাদী ঘােড়া যৌন উত্তেজনার কারণে ছটফট করছিল প্ল্যাটিনাম (Platinum Metallicum) খাওয়ানাের পর তার অস্থিরতা চলে যায়।
৩. একটি ঘােড়ার গলার গ্ল্যান্ড ফোলে যায় (টনসিল), যার কষ্ট সন্ধ্যার দিকে বৃদ্ধি পেত। হিপার সালফ (Hepar Sulph) প্রয়ােগে সেটি সেরে যায়।
৪. আরেকটি ঘােড়া চুলকানির কারণে দেওয়ালে শরীর ঘষতে ছিল। সালফার (Sulphur) দেওয়াতে তার সমস্যা ভালাে হয়ে যায়।
৫, আরেকটি বাছুর অনেকদিন যাবত পঙ্গু / প্যারালাইসিস হয়েছিল, দাঁড়াতে পারত না, সন্ধ্যার দিকে তার অবস্থা সবচেয়ে বেশী খারাপ হইত। নাক্স ভমিকা (Nux Vomica), ব্রায়ােনিয়া (Bryonia Alba) দুই দিন পর পর দেওয়াতে সেটি সুস্থ হয়ে যায়।
0 Response to "পশু-পাখিদের রোগ নিরাময় - Animal and birds Diseases"
Post a Comment